মৃত্যুর পরও জীবন্ত নেতা
১৯৮৩ সালে লারমা নিহত হলেও তাঁর নাম আজও পাহাড়ি রাজনীতিতে অমর। প্রতি বছর ১০ নভেম্বর তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানে মানুষ মোমবাতি জ্বালায়, সমাবেশ করে।
একজন বৃদ্ধা নারী এক স্মরণসভায় বলেছিলেন—
“লারমা ছিল আমাদের মাটি, আমাদের ভরসা। ও চলে গেছে, কিন্তু ওর কথা আজও আমাদের কানে বাজে।”
লার্মার দর্শনের শক্তি
লারমা শিখিয়েছিলেন—
-
জাতিসত্তা ≠ নাগরিকত্ব। নাগরিক হিসেবে সবাই বাংলাদেশি হতে পারে, কিন্তু জাতিসত্তায় ভিন্নতাকে সম্মান জানাতে হবে।
-
স্বায়ত্তশাসন ≠ বিচ্ছিন্নতা। পাহাড়ি মানুষ বাংলাদেশকেই তাদের দেশ মনে করে, কিন্তু নিজেদের সংস্কৃতি ও অধিকার রক্ষার স্বাধীনতা চায়।
-
সংগঠনই শক্তি। তিনি ছাত্র, যুব, নারী—সব স্তরে সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন।
এই দর্শন এখনো পাহাড়ি রাজনীতির প্রাণকেন্দ্রে।
সমকালীন প্রাসঙ্গিকতা
আজও বাংলাদেশে “অধিকার ও স্বীকৃতি”র প্রশ্নে লার্মার কথা আলোচিত হয়।
-
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৩(ক) ক্ষুদ্র নৃ–গোষ্ঠীর সংস্কৃতি রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিলেও, অনুচ্ছেদ ৬–এ বলা হয়েছে জাতি হিসেবে সবাই বাঙালি। এই দ্বৈত অবস্থান নিয়ে বিতর্ক এখনো চলছে।
-
শান্তিচুক্তির অসম্পূর্ণ বাস্তবায়ন পাহাড়ি মানুষের মনে ক্ষোভ তৈরি করছে।
এই সব আলোচনায় বারবার উচ্চারিত হয় এক নাম—এম এন লার্মা।
উত্তর প্রজন্মের কাছে লার্মা
বর্তমান প্রজন্ম লার্মাকে শুধু একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে নয়, বরং এক আদর্শ সংগ্রামী নেতা হিসেবে দেখে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা তাঁর বক্তব্য উদ্ধৃত করে, গবেষকরা তাঁর রাজনীতিকে “স্বীকৃতি–ভিত্তিক গণতন্ত্র” হিসেবে বিশ্লেষণ করেন।
এক তরুণ পাহাড়ি কর্মী একবার বলেছিলেন—
“আমরা জানি, লারমা হয়তো সব অর্জন করতে পারেননি। কিন্তু তিনি আমাদের পথ দেখিয়ে গেছেন। আমরা তাঁর অসমাপ্ত স্বপ্ন পূরণ করব।”
ভাবুন, এক তরুণ নেতা সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন—“আমি বাংলাদেশি নাগরিক, কিন্তু আমি চাকমা।”
আজ প্রায় অর্ধশতক পরও সেই কথাটি বাংলাদেশের রাজনীতি ও সংবিধান–আলোচনায় প্রাসঙ্গিক।
এটাই প্রমাণ করে—নেতা হয়তো মারা যান, কিন্তু তাঁর দর্শন বেঁচে থাকে। এম এন লারমা সেই বেঁচে থাকা দর্শনের নাম।