জীবন গাঁথায় এম এন লারমাঃ কাপ্তাই বাঁধ – নদীর বুকে বাঁধ, মানুষের বুকে ক্ষত (২য় পর্ব)

Jumjournal

August 31, 2025

১৯৬০ দশকের শুরুতে কর্ণফুলীর বুকে তৈরি হলো বিশাল কাপ্তাই বাঁধ। রাষ্ট্র বলল—“বিদ্যুৎ আসবে, উন্নয়ন আসবে।” কিন্তু উন্নয়নের এ গল্প পাহাড়ি মানুষের জীবনে নেমে এল দুঃস্বপ্নের মতো

ডুবে যাওয়া গ্রাম

হাজার হাজার একর জমি, শত শত গ্রাম—সবই ডুবে গেল পানির নিচে।

  • প্রায় ১ লক্ষ মানুষ গৃহহীন হলো।

  • অনেক পরিবার ছিন্নভিন্ন হয়ে সীমান্ত পাড়ি দিল, কেউ গেল মিজোরামে, কেউ ত্রিপুরায়, কেউ অরুণাচলে।

  • চাকমা রাজবাড়িও পানির নিচে হারিয়ে গেল।

গ্রামের প্রবীণরা আজও বলেন—“আমাদের পৈতৃক ভিটেমাটি, যেখানে পূর্বপুরুষের কবর ছিল—সব ডুবে গেল।”

লারমা  তখন তরুণ। তিনি দেখলেন—তাঁর আত্মীয়, প্রতিবেশীরা ভিটে ছেড়ে যাচ্ছে। কেউ কাঁদছে, কেউ কিছুই বলতে পারছে না। মানুষের চোখে সেই আতঙ্ক, অসহায়তা—তাঁর মনে গেঁথে গেল।

বাস্তুচ্যুতির কাহিনি

এক বৃদ্ধ চাকমা বলেছিলেন—
“আমার বাড়ি যেখানে ছিল, এখন সেখানে মাছ সাঁতার কাটে। আমার ধানের গোলা ডুবে গেছে। আমাদের জীবন–সংস্কৃতি চলে গেল পানির নিচে।”

আরেকজন নারী কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন—
“আমরা ভেবেছিলাম উন্নয়ন মানে আলো, বিদ্যুৎ। কিন্তু আমাদের ঘরবাড়ি গেল। আমরা পেলাম শুধু অন্ধকার।”

এই গল্পগুলো লার্মার মনে গেঁথে গেল স্থায়ীভাবে।

লার্মার উপলব্ধি

কাপ্তাই বাঁধ শুধু নদীর ধারা থামায়নি, থামিয়ে দিয়েছিল পাহাড়ি মানুষের বিশ্বাসও। লারমা বুঝলেন—রাষ্ট্র যদি এভাবে উন্নয়নের নামে মানুষকে উচ্ছেদ করে, তাহলে ভবিষ্যতে পাহাড়িদের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে।

তখনই তাঁর মনে জন্ম নিল প্রশ্ন—
“আমাদের অধিকার যদি আমরা নিজেরা না রক্ষা করি, তবে কে করবে?”

এই প্রশ্নই তাঁকে ছাত্ররাজনীতিতে, পরে জাতীয় রাজনীতিতে নিয়ে গেল।

©Jumournal-2025

M. N. LARMA

BACK TO TOP