জীবন গাঁথায় এম এন লারমাঃ অভ্যন্তরীণ ভাঙন, হত্যাকাণ্ড ও এক অসমাপ্ত গল্প ( ৮ম পর্ব)

Jumjournal

August 31, 2025

ভেতরের বিরোধ

দীর্ঘদিন গোপন লড়াই চালাতে গিয়ে PCJSS–এর ভেতরেও মতভেদ বাড়তে লাগল।

  • কেউ চাইত সশস্ত্র সংগ্রাম আরও তীব্র হোক।

  • কেউ চাইত রাজনৈতিক সমঝোতার পথ খোলা থাকুক।

  • আবার কেউ লার্মার নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে লাগল।

এই বিভাজন ধীরে ধীরে মারাত্মক আকার নিল।

১৯৮২ এর ভাঙন

১৯৮২ সালে PCJSS ভেঙে কয়েকটি অংশে বিভক্ত হলো। এর মধ্যে একটি অংশ ছিল লার্মাবিরোধী। তাঁরা মনে করত—লার্মার নেতৃত্ব যথেষ্ট শক্তিশালী নয়, তিনি বেশি সমঝোতামুখী।

লারমা চেষ্টা করলেন ভেতরের দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলতে। কিন্তু পাহাড়ি রাজনীতির চাপ, বাইরের সংঘাত, আর ভেতরের অসন্তোষ—সব মিলিয়ে তিনি যেন এক জালের মধ্যে আটকে গেলেন।

সেই করুণ দিন

১০ নভেম্বর ১৯৮৩।
খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার খেদারাছড়া নামের এক গ্রামে লারমা অবস্থান করছিলেন। হঠাৎই সশস্ত্র এক দল তাঁর ওপর হামলা চালায়।

তিনি নিহত হলেন সেখানেই। বয়স তখন মাত্র ৪৩।

মৃত্যুর প্রতিক্রিয়া

লার্মার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ল পাহাড়ে আগুনের মতো। গ্রামে গ্রামে শোকের মাতম। মানুষ কাঁদল—
“আমাদের নেতা কেড়ে নিল আমাদের কাছ থেকে।”

অনেকে বিশ্বাস করতে পারছিল না—তাঁকে হত্যা করেছে নিজেরাই, ভেতরের বিদ্রোহী গোষ্ঠী। এই বিশ্বাসঘাতকতা পাহাড়ি আন্দোলনে আরও এক অমোচনীয় ক্ষত রেখে গেল।

অসমাপ্ত স্বপ্ন

লার্মার মৃত্যুতে যেন থেমে গেল এক সম্ভাবনা। তিনি যে স্বপ্ন দেখেছিলেন—অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইকে শান্তির পথে নিয়ে যাওয়ার—তা অসমাপ্ত রয়ে গেল।

পরে তাঁর ছোট ভাই জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লার্মা) নেতৃত্ব নিলেন। কিন্তু মানুষ জানত—এম এন লার্মার মতো ক্যারিশমাটিক, ত্যাগী নেতা আর কেউ নেই।

ভাবুন, মাত্র ৪৩ বছরের এক তরুণ নেতা—যিনি সংসদে দাঁড়িয়ে সাহসী বক্তব্য দিয়েছিলেন, যিনি এক লক্ষ বাস্তুচ্যুত মানুষের ক্ষতকে নিজের ক্ষত বানিয়েছিলেন—তিনি নিজ দলের ভেতরের গুলিতে প্রাণ হারালেন।

এ যেন পাহাড়ের ইতিহাসে দ্বিতীয় এক কাপ্তাই বাঁধ—
প্রথমটি কেড়ে নিয়েছিল জমি, দ্বিতীয়টি কেড়ে নিল নেতা।

©Jumournal-2025

M. N. LARMA

BACK TO TOP