জীবন গাঁথায় এম এন লারমাঃ শান্তিচুক্তি – এক অসমাপ্ত প্রতিশ্রুতি( ৯ম পর্ব )

Jumjournal

August 31, 2025

লড়াইয়ের দুই দশক

এম এন লারমা নিহত হওয়ার পর তাঁর ছোট ভাই জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লার্মা) PCJSS–এর নেতৃত্ব নিলেন। ১৯৮০–৯০ দশকে পাহাড়ে সংঘাত ভয়াবহ আকার ধারণ করল।

  • গ্রামে গ্রামে গেরিলা যুদ্ধ, সেনাবাহিনীর অভিযানে অসংখ্য প্রাণহানি।

  • হাজারো পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়ে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের ত্রিপুরায় শরণার্থী হয়ে রইল।

  • পাহাড়ি জনগণের জীবনে তৈরি হলো দীর্ঘ আতঙ্কের রাত।

এমন পরিস্থিতিতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহল চাপ বাড়াতে শুরু করল—“পাহাড়ি সমস্যার সমাধান যুদ্ধ নয়, রাজনৈতিক সমঝোতা।”

আলোচনার টেবিলে ফেরা

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে আবার আলোচনার দ্বার খোলা হলো। দীর্ঘ বৈঠক, আলোচনা, খসড়া প্রস্তাবের পর অবশেষে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ঢাকায় স্বাক্ষরিত হলো চট্টগ্রাম হিল ট্র্যাক্টস শান্তিচুক্তি

চুক্তির মূল ধারা গুলো ছিল—

  • পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ গঠন।

  • ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য স্বতন্ত্র ভূমি কমিশন।

  • সেনা শিবির কমানো।

  • শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন।

  • পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষার নিশ্চয়তা।

জনগণের আশা

চুক্তির দিন রাঙামাটির বাজারে হাজারো মানুষ মিছিল করল। তাদের চোখে একটিই আশা—“এবার হয়তো শান্তি আসবে।”
অনেকেই বলেছিল—
“যদি এম এন লারমা আজ বেঁচে থাকতেন, তবে এ চুক্তি তাঁর স্বপ্নের ফসল হতো।”

বাস্তবায়নের জটিলতা

কিন্তু সময়ের সাথে দেখা গেল—চুক্তির অনেক ধারা এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি।

  • ভূমি কমিশন কাজ শুরু করলেও বাস্তব ফল আসেনি।

  • সেনা শিবির কমানো হয়েছে আংশিকভাবে।

  • শরণার্থীদের একটি বড় অংশ ফিরেছে, কিন্তু অনেকের পুনর্বাসন অসম্পূর্ণ।

ফলে পাহাড়ি মানুষের মধ্যে হতাশা তৈরি হলো। অনেকে বলল—
“চুক্তি হলো কাগজে, কিন্তু আমাদের জীবনে খুব একটা বদল আনেনি।”

©Jumournal-2025

M. N. LARMA

BACK TO TOP