জীবন গাঁথায় এম এন লারমাঃ PCJSS ও শান্তিবাহিনী – রাজনীতি থেকে সংগ্রামের পথে( ৬ষ্ঠ পর্ব )

Jumjournal

August 31, 2025

চার দফা দাবি সরকার মানেনি। সংবিধানে পাহাড়িদের জন্য আলাদা কোনো স্বীকৃতি এল না। ফলে পাহাড়ি সমাজে আস্থাহীনতা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল।

লারমাতখন বুঝলেন—সংগঠন ছাড়া অধিকার আদায় সম্ভব নয়। তাই তিনি গড়ে তুললেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (PCJSS)

পিসিজেএসএস গঠনের গল্প

১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকেলারমা গোপনে পাহাড়ি গ্রামগুলোতে ঘুরতে শুরু করেন। তিনি যুবকদের ডাকলেন—
“আমরা যদি এক না হই, তবে আমাদের দাবিকে কেউ গুরুত্ব দেবে না। চল, একসাথে হই।”

১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩–এ আনুষ্ঠানিকভাবে PCJSS জন্ম নিল। এর মূলনীতি ছিল—

  • মানবতাবাদ

  • গণতন্ত্র

  • ধর্মনিরপেক্ষতা

  • পাহাড়ি অধিকার রক্ষা

লারমা সভাপতি হলেন। তাঁর পাশে ছিলেন তাঁর ভাই জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা এবং আরও অনেকে।

শান্তিপূর্ণ থেকে সশস্ত্র পথে

প্রথম দিকে PCJSS শান্তিপূর্ণভাবে দাবি আদায়ের চেষ্টা করল। কিন্তু যখনই তারা সরকারের কাছে স্মারকলিপি দিল, উত্তর এলো গড়িমসি বা উপেক্ষা।

গ্রামের মানুষ ক্ষুব্ধ হতে লাগল। লারমা তখন দ্বিধায় ছিলেন—তিনি বিচ্ছিন্নতার রাজনীতি করতে চান না, আবার জনগণের ক্ষোভও দমন করতে পারছেন না।

অবশেষে PCJSS তৈরি করল একটি সশস্ত্র শাখা—যার নাম রাখা হলো শান্তিবাহিনী
নামটা যেন ব্যঙ্গাত্মক—কারণ তারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হলেও স্বপ্ন ছিল শান্তির।

শান্তিবাহিনীর প্রথম দিনগুলো

শান্তিবাহিনী তখন ছিল পাহাড়ি যুবকদের ছোট ছোট দলে সংগঠিত একটি গেরিলা বাহিনী। তাদের প্রশিক্ষণ ছিল সীমান্তের ওপারে। উদ্দেশ্য ছিল—

  • পাহাড়ি গ্রামে সংগঠন বিস্তার

  • আত্মরক্ষার ব্যবস্থা

  • সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি

লারমা যদিও ব্যক্তিগতভাবে সশস্ত্র সংগ্রামে অনিচ্ছুক ছিলেন, কিন্তু জনগণের চাপ এবং সময়ের বাস্তবতায় তিনি এ পথকে মেনে নিতে বাধ্য হলেন।

সংগঠনের কাঠামো

PCJSS কেবল রাজনৈতিক দল ছিল না, এটি হয়ে উঠেছিল একধরনের সমান্তরাল শাসনব্যবস্থা।

  • প্রতিটি গ্রামে গ্রামপঞ্চায়েত গঠিত হতো।

  • যুবকদের জন্য যুবসমিতি, নারীদের জন্য মহিলা সমিতি থাকত।

  • গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো গণসমাবেশে।

এইভাবে পাহাড়ি সমাজে লার্মার নেতৃত্ব এক প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিল।

©Jumournal-2025

M. N. LARMA

BACK TO TOP