কাপ্তাই বাঁধের পর বাস্তুচ্যুত পাহাড়ি মানুষের চোখে যখন হতাশা আর ক্ষোভ জমে উঠছে, তখন তরুণ লারমা বুঝলেন—শুধু আক্ষেপ করলে হবে না। সংগঠিত হতে হবে।
১৯৬৩ সাল। চট্টগ্রাম পাহাড়ে পাহাড়ি ছাত্ররা একত্র হয়ে তৈরি করল পাহাড়ি ছাত্র সমিতি। উদ্দেশ্য—শিক্ষা, অধিকার, এবং ভূমি রক্ষার দাবি তোলা। এই সমিতির অন্যতম সক্রিয় মুখ ছিলেন লার্মা।
একদিন রাঙামাটি বাজারে ছাত্রদের এক প্রতিবাদ মিছিল হলো। তারা স্লোগান দিল—
“আমাদের জমি ফেরত দাও!”
“আমাদের অধিকার দাও!”
এই মিছিলে লারমা ছিলেন সামনের সারিতে। তিনি মাইকে বলছিলেন—
“আমাদের জমি আমাদের! কেউ তা কেড়ে নিতে পারে না।”
সরকার তখন এসব প্রতিবাদকে বিদ্রোহ মনে করত। পুলিশ এসে লাঠিচার্জ করল। কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হলো। লার্মাকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হলো।
জেলের দিনগুলো
লার্মার জীবনে এটাই ছিল প্রথম গ্রেপ্তার। ছোট্ট সেলে বসে তিনি ভাবলেন—“আমার অপরাধ কী? আমি তো শুধু নিজের মানুষের অধিকারের কথা বলেছি।”
কিন্তু সেই অন্ধকার সেলে তিনি ভয় পাননি। বরং তাঁর মনে আরও দৃঢ় হলো এই বিশ্বাস—“অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হলে শাস্তি পেতেই হবে।”
জেল থেকে বেরিয়ে তিনি সঙ্গীদের বললেন—
“তোমরা ভেবো না, আমাকে ভাঙা গেছে। আমি ভাঙিনি। আমি আরও শক্ত হয়েছি।”
এই কথাই তরুণদের সাহস দিল। তাঁরা বুঝল—লারমা শুধু বক্তা নন, তিনি সত্যিকারের নেতা।