জীবন গাঁথায় এম এন লারমাঃ সংসদে পাহাড়ের কণ্ঠস্বর(৪র্থ পর্ব)

Jumjournal

August 31, 2025

১৯৭০ সালের নির্বাচন। পাকিস্তানের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক নির্বাচন। পাহাড়ি মানুষের পক্ষে প্রাদেশিক পরিষদের আসনে দাঁড়ালেন এম এন লার্মা। তিনি ছিলেন তখন তরুণ, সাহসী, এবং মানুষের আস্থাভাজন।

ভোট হলো, ফলাফল এলো—লারমা জয়ী
স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে আবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাঁড়ালেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম–১ আসন থেকে তিনি হলেন সংসদ সদস্য।

সংসদে প্রথম ভাষণ

নতুন বাংলাদেশের সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন—
“আমরা সবাই বাংলাদেশি নাগরিক, কিন্তু আমরা সবাই বাঙালি নই। আমি চাকমা, আমার ভাই মারমা, আমার প্রতিবেশী ত্রিপুরা। আমাদের জাতিসত্তা আলাদা, আমাদের সংস্কৃতি আলাদা। রাষ্ট্র যদি তা স্বীকার না করে, তবে আমরা বাদ পড়ে যাব।”

সংসদে মুহূর্তেই সাড়া পড়ে গেল। কারও মুখে বিস্ময়, কারও মুখে ক্ষোভ। অনেকে বলল—“সে কি! বাংলাদেশে সবাই বাঙালি, ও আবার আলাদা কথা বলে?”

কিন্তু লারমা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রইলেন। তিনি জানতেন, একদিন এই কথাই ইতিহাসে স্থান পাবে।

চার দফা দাবি

সংসদে তিনি আরও বললেন—
১. পার্বত্য চট্টগ্রামকে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করতে হবে।
২. ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন বহাল রাখতে হবে।
৩. ঐতিহ্যবাহী চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা রাজপ্রথাকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে।
৪. এই সবকিছু রক্ষার সাংবিধানিক নিশ্চয়তা থাকতে হবে।

কিন্তু সরকার তাঁর দাবিগুলো আমলে নিল না। সংবিধানে লেখা হলো—“জাতি হিসেবে জনগণ বাঙালি।”

৩১ অক্টোবর ১৯৭২ সালে গণপরিষদে এ অনুচ্ছেদ পাশ হলো। প্রতিবাদে এম এন লারমা ওয়াকআউট করলেন।

এ যেন ছিল এক প্রতীকী ঘোষণা—
“আমি সংখ্যায় একা হতে পারি, কিন্তু সত্যের পাশে আছি।”

ভাবুন তো, সংসদের ভেতরে শত শত মানুষ, চারপাশে শোরগোল। আর মাঝখানে দাঁড়িয়ে এক পাহাড়ি তরুণ, বলছেন—“আমরা নাগরিকত্বে বাংলাদেশি, জাতিসত্তায় ভিন্ন।”

তিনি জানতেন এই কথার জন্য তাঁকে অনেক গালমন্দ শুনতে হবে, হয়তো রাজনৈতিক জীবন ঝুঁকির মুখে পড়বে। তবু তিনি বললেন। কারণ তাঁর কাছে সত্য লুকানো মানেই ছিল মানুষের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা।

©Jumournal-2025

M. N. LARMA

BACK TO TOP